রামজীবনপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় পরিচিতি
একটি আলোর সন্ধান: চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার ০১ নং বালিয়াডাঙ্গা ইউনিয়ন এর রামজীবনপুর গ্রামের শান্ত গ্রামীণ পথ ধরে হাঁটলে চোখে পড়ে একটি প্রাণবন্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান — রামজীবনপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয়। ১৯৯৯ সালে প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই বিদ্যালয় হয়ে উঠেছে গ্রামের শিশুদের স্বপ্নপূরণের ঠিকানা। বিদ্যালয়ের চারপাশে রয়েছে কৃষিভিত্তিক গ্রামীণ পরিবেশ এবং প্রাকৃতিক সবুজ ছায়া, যা শিক্ষার্থীদের মনোযোগ বৃদ্ধি ও পরিবেশবান্ধব শিক্ষার জন্য উপযোগী। ছোট্ট এক বিদ্যালয় আজ পরিণত হয়েছে এলাকার অন্যতম শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ।
স্বপ্নের বীজ বোনা হয়েছিল এখানে: ১৯৯৯ সালে স্থানীয় মানুষজন
ও শিক্ষানুরাগীদের মিলিত প্রচেষ্টায় এই বিদ্যালয় গড়ে উঠেছিল এক ছোট্ট ঘরে। অতীতের দিনের
স্মৃতিতে ডুবে থাকলে জানা যায়, গ্রামবাসী মিলে কত উদ্দীপনা আর ভালোবাসায় এই বিদ্যালয়
গড়ে তুলেছিলেন। তখন ছিল শুধুমাত্র কয়েকজন ছাত্রছাত্রী, কিন্তু ছিল এক আশার দীপ্তি।
সেই আশায় ছড়িয়ে পড়লো জ্ঞান চর্চার আগুন, যা আজ পূর্ণাঙ্গ বিদ্যালয়ে পরিণত হয়েছে। কিন্তু
সবাই জানত, এই জায়গা থেকে বের হবে নতুন প্রজন্ম, যারা স্বপ্ন দেখবে উজ্জ্বল ভবিষ্যতের।
প্রকৃতির কোলে শিক্ষার ছোঁয়া: বিদ্যালয়ের মাঠ ঘেরা একদম প্রকৃতির কোলে। গাছেদের
সুরক্ষায় ছায়া পড়ে পড়ার ঘরে। পাখির ডাক, মাটির গন্ধ আর শিক্ষার্থীদের হাসিমাখা মুখ
একসাথে মিশে এক অসাধারণ পরিবেশ সৃষ্টি করে। একবার এসে দেখলেই বোঝা যায়, এখানে শিক্ষার
সাথে সঙ্গে আছে ভালোবাসা ও মমতা।
শিক্ষকদের মায়া ও মেধা: বিদ্যালয়ে বর্তমানে মোট ১৩ জন শিক্ষক কর্মরত আছেন,
যাদের অধিকাংশই উচ্চশিক্ষিত এবং নিয়মিত প্রশিক্ষণ নিয়ে পাঠদান করেন। শিক্ষকবৃন্দের
মধ্যে রয়েছে পুরুষ ও নারী শিক্ষকরা, যারা শিক্ষার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের মানসিক ও
নৈতিক বিকাশেও গুরুত্ব দেন। এখানকার শিক্ষকরা শুধু পাঠদান করেন না, বরং শিক্ষার্থীদের
বন্ধু, পথপ্রদর্শক ও প্রেরণার উৎস। তারা প্রতিদিন সকালে স্কুলের দরজা খুলে দেন এক উজ্জ্বল
দিনের জন্য। নতুন পাঠ শেখানো, ব্যর্থতার হাত ধরেই এগিয়ে যাওয়ার শিক্ষা দেয়ার পাশাপাশি
জীবন-মূল্যবোধ গড়ে তোলেন।
শিক্ষার্থীবৃন্দ: বিদ্যালয়ে বর্তমানে প্রায় 367 জন শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত,
যারা ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণি পর্যন্ত বিভিন্ন বিভাগে ভাগ হয়ে পড়াশোনা করে। শিক্ষার্থীদের
উপস্থিতি ও শৃঙ্খলা সর্বদা উন্নতির লক্ষ্যে পরিচালিত হয়। গর্বের বিষয়, তারা এসএসসি
পরীক্ষায় ধারাবাহিক ভালো ফলাফল দেখিয়ে বিদ্যালয়ের নাম উজ্জ্বল করছে।
অবকাঠামো ও শিক্ষার আধুনিক সুযোগ-সুবিধা: বিদ্যালয়ের চারতলা ভবনে রয়েছে সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ, আধুনিক বিজ্ঞান ও কম্পিউটার ল্যাব, যেখানে শিক্ষার্থীরা হাতেকলমে শিখছে আধুনিক প্রযুক্তি ও বিজ্ঞানের রহস্য। বিশাল খেলার মাঠে প্রতিযোগিতা হয়, যেখানে শারীরিক শিক্ষা ও মেধার বিকাশ ঘটে। এছাড়াও
- এখানে রয়েছে একটি আধুনিক চারতলা একাডেমিক ভবন, যেখানে
রয়েছে শিক্ষার্থীদের জন্য সুসজ্জিত শ্রেণিকক্ষ।
- প্রতিটি শ্রেণিকক্ষে
রয়েছে পর্যাপ্ত আলো ও বায়ু চলাচল।
- সম্পূর্ণ সজ্জিত বিজ্ঞানাগার,
যেখানে পদার্থবিজ্ঞান, রসায়ন ও জীববিজ্ঞানের আধুনিক সরঞ্জাম রয়েছে।
- একটি কম্পিউটার ল্যাব,
যেখানে আধুনিক কম্পিউটার এবং ইন্টারনেট সুবিধা রয়েছে।
- একটি well-stocked গ্রন্থাগার, যেখানে
রয়েছে প্রায় ৪০০০ এর বেশি বই।
- প্রশস্ত ও পরিচ্ছন্ন
খেলার মাঠ, যেখানে ক্রিকেট, ফুটবল ও অন্যান্য খেলাধুলার সুযোগ রয়েছে।
- ছাত্র-ছাত্রীদের
জন্য পৃথক বাথরুম ও বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা রয়েছে।
সহ-পাঠক্রমিক কার্যক্রম: বিদ্যালয় প্রতি বছর জাতীয় দিবস, আন্তর্জাতিক
মাতৃভাষা দিবস, স্বাধীনতা ও বিজয় দিবস আনন্দের সাথে উদযাপন করে। বৃক্ষরোপণ অভিযান ও
পরিবেশ সংরক্ষণ কর্মসূচি নিয়মিত পালন করে। স্কাউট ও গার্লস গাইডের মাধ্যমে সামাজিক
দায়িত্ববোধ গড়ে তোলে।
একাডেমিক সাফল্য: রামজীবনপুর আদর্শ উচ্চ
বিদ্যালয় শিক্ষা বোর্ড, পাবলিক পরীক্ষায় ধারাবাহিক ভালো ফলাফল অর্জন করেছে। প্রতি বছর
এসএসসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে ভালো ফলাফল অর্জনের মাধ্যমে বিদ্যালয়টির সুনাম বৃদ্ধি করছে। অনেক শিক্ষার্থী জিপিএ-৫ পেয়ে জেলার মধ্যে বিদ্যালয়ের গৌরব বাড়িয়েছে।
প্রাক্তন শিক্ষার্থীর কৃতিত্ব: বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা দেশের নানা
গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে অবদান রেখে চলেছেন — শিক্ষকতা, সরকারি চাকরি,
চিকিৎসক, প্রকৌশলী, উদ্যোক্তা এবং বিদেশেও সাফল্য অর্জন করেছেন। তাঁরা নিয়মিত বিদ্যালয়ের
উন্নয়নে সাহায্য ও পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
প্রশাসন ও অভিভাবক অংশগ্রহণ: বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি (এসএমসি) অভিভাবক, শিক্ষক ও স্থানীয় সমাজের প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে গঠিত। তারা বিদ্যালয়ের নানামুখী উন্নয়নে সক্রিয় ভূমিকা পালন করে। বিদ্যালয়ের পরিচালনা কমিটি বিদ্যালয়ের সার্বিক উন্নয়ন নিশ্চিত করার জন্য সক্রিয়ভাবে কাজ করে। প্রধান শিক্ষক ও অভিভাবকদের সঙ্গে সমন্বয় করে তারা শিক্ষার মান ও পরিবেশ উন্নয়নে অবিরত উদ্যোগ গ্রহণ করে থাকে।
আনন্দ-আড্ডা আর নৈতিক শিক্ষা: শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা
একত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক দিবস উদযাপন করে। স্কুলের বার্ষিক সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায়
প্রাণভরে গান, নাচ ও নাটক পরিবেশন হয়। প্রতিবছর বৃক্ষরোপণ ও পরিচ্ছন্নতা অভিযান আয়োজন
করে পরিবেশ সচেতনতা ছড়িয়ে দেয়। এইসব কাজ শিক্ষার্থীদের মধ্যে সামাজিক দায়িত্ববোধ তৈরি
করে।
শেষ কথা: রামজীবনপুর আদর্শ উচ্চ
বিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নয়, এটি শিক্ষার এক উজ্জ্বল বাতিঘর, উন্নয়নের
কেন্দ্র যেখানে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান, নৈতিকতা ও মনুষ্যত্বের আদর্শ শেখে যা গ্রামের হাজারো
শিশুদের জীবনে আলো দেয়। এখান থেকে গড়ে উঠছে স্বপ্নদ্রষ্টা, যারা দেশের গর্ব হয়ে উঠবে।
বিদ্যালয়টি এলাকার শিক্ষার মান উন্নয়নে ও ভবিষ্যৎ প্রজন্ম গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা
পালন করে যাচ্ছে। আমাদের বিশ্বাস, রামজীবনপুর আদর্শ উচ্চ বিদ্যালয় তার যাত্রা অব্যাহত
রাখবে এবং শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেবে আরও অনেক দূর।